
এস এম তাজাম্মুল,মণিরামপুরঃ হঠাৎ করে উঠতি বয়সী তরুন প্রজন্মের কিশোরদের দৌরাত্ম বিস্তার ও প্রভাবে যশোরের মণিরামপুর উপজেলা ও পৌরশহরের আশপাশে এমনকি প্রধান শহরেও দেখা গেছে বেশ কয়েকটি বিশৃঙ্খলা।সামান্য ঘঠনাকে বৃদ্ধিকরে অসামাজিক ও অতিগোপনীয় প্রদর্শনে স্থানীয়দের কব্জায় নিয়ে অর্থ লুটের মতো জঘন্য অবস্থা সৃষ্ঠি করে সন্মান হানি করছে ক্ষতিগ্রস্থের।মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে ব্যাক্তিগত ডকুমেন্টরিকে আয়ত্বে করে ব্লাকমেইলের ফাঁদে ফেলে অর্থ দাবী করছে দামি দামি মোটরসাইকেলে দাপিয়ে বেড়ানো কিশোর গ্যাং চক্র।
নির্জন পথে হাটা বা পৌরশহরে বাইরে থেকে আসা তরুন তরুণীদের টার্গেট করে জোরপূর্বক আটকে মারধরের পর মিথ্যা স্বীকারোক্তি রেকর্ড করে সেটাই প্রমান হিসাবে জাহির করছে এ চক্র।ছিনিয়ে নিচ্ছে হ্যান্ডসেট ও কাছে থাকা নগদ অর্থ এমনকি শরীরের ব্যবহার্য স্বর্ণ।কিশোর গ্যাংয়ের গ্যাড়াকলে পড়ে পরবর্তীতে মুখ খুলতেও ভয় পাচ্ছে ক্ষতিগ্রস্থরা।
নিত্তনৈমিত্তিক এসব ঘঠনা ছাড়াও বেআইনি বহুত অপকর্মে সংঘবদ্ধের প্রধান কারন অনলাইন জুয়া ক্যাসিনো ও দলবদ্ধ মাদকসেবন।মুলত অনলাইন জুয়া ও মাদকের অর্থ যোগান দিতে পরিবার ব্যার্থ হওয়ায় জড়িয়ে পড়ছে ছিনতাই,চুরি,বিশৃঙ্খলার সাথে। সামাজিক অবক্ষয়ের পাশাপাশি নৈতিকতা বিবেচনায় সন্মান হানির মতো পরিস্থিতির সম্মূখে পড়ে অভিভাবক মহলের কোন্দলের আগুনের ফুলকির প্রভাব ফেলছে রাজনৈতিক মহলে।পৌর শহরের গরুহাট মোড়,দোলখোলা মোড়,সম্মীলণী স্কুল মোড়,মোহনপুর বটতলা সহ পৌর শহরের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ন মোড়ে দেখা যায় কিশোর গ্যাংয়ের আনাগোনা।সবচেয়ে বেশি দেখা যায় হাসপাতাল বেস্টনী,বাধাঘাটা কারিগরি ভোকেশনাল স্কুলের ও বাদামতলা ব্রিজের আশপাসে।সামাজিক মূল্যবোধ ও রাজনৈতিক প্রটোকলের মাঝে পড়ে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন।
শুধুই মণিরামপুর উপজেলা বা পৌরসভা নই! অন্তবর্তীকালীন সরকারের চলতি সময়কালে দেশব্যাপী এই কিশোর গ্যাংশের রেকর্ড বলছে,ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও জড়িয়ে পড়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সমাজ ও আইন বহির্ভূত কর্মকান্ডে।এলাকা ভিত্তিক সংঘবদ্ধ একটি চক্র ছোটখাটো বিষয়কে পুজি করে বড় সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে।তথ্য মোতাবেক,চুরি,ছিনতাই,চাদাবাজি,ব্লাকমেইল,প্রতারনা,নেশা সেবন সহ কয়েকটি পন্থায় কিশোর গ্যাং বিশৃঙ্খলা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চলেছে।জনগনের রোষানলে পড়ে বা প্রশাসনকে এড়াতে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা স্থানীয় রাজনৈতিক সংগঠন ও নেতাদের পরিচয় বহনে জনগনের কাছে রাজনৈতিক নেতাদের ইমেজ নষ্ট করছে।তবে স্থানীয়ভাবে সুবিধাভোগী এক শ্রেণীর রাজনৈতিক মহল কিশোর গ্যাংদের মাধ্যমে মোটা অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠতে দেখা গেছে।
সম্প্রতি মণিরামপুর উপজেলা ও পৌরশহরের আশপাশে কয়েকটি বিশৃঙ্খলাপূর্ণ ঘঠনায় কিশোর গ্যাংয়ের উচ্ছৃঙ্খলতা জনমনে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।চলতি মে মাসের প্রথম দিকে উপজেলার মুন্সিখানপুর নিজের গলা নিজেই ছুরি দিয়ে কেটে অর্থ লোপাটের ঘঠনা ঘটে।পরে জানাযায়,অনলাইন ক্যাসিনো জোয়াতে একের পর এক নগদ অর্থ বাজিতে হেরে মাহাজনের টাকার বুঝ হারিয়ে ঐ নাটকের সৃষ্টি করে ভিকটিম ও আসামী নিজেই।তার কয়েকদিন পরেই কাশিপুর গ্রামে প্রেমিকের ফোন নাম্বার ব্লক করায় ক্ষিপ্ত হয়ে প্রেমিক কিশোর তার কয়েকজন বন্ধুকে সাথে নিয়ে সংঘবদ্ধভাবে প্রেমিকাকে টেনেহিঁচড়ে ঘরের বাইরে এনে এলোপাতাড়ি ছুরি মারে।
সর্বশেষ কয়েকদিন আগেও মণিরামপুর পৌরশহরের বাধাঘাটার জৈনক কুদ্দুসের বাড়িতে ১টি প্রেমিক যুগল ধরা পড়েছে বদ্ধঘরে এমন ১টি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে রীতিমত ভাইরাল হতে দেখা গেছে।যে ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে কেউ একজন তাদেরকে চাপ প্রয়োগে স্বীকারোক্তি রেকর্ড করছেন।ভিডিওর পরিপেক্ষিতে জনমনে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সচেতন মহলের নেতিবাচক সব মন্তব্যে সামাজিক অবস্থা চরম অবনতির দিকে যাচ্ছে বলে ধারনা করছেন সুধীজনেরা।এ ঘটনায় ৯৯৯ ফোন কলের মাধ্যমেও প্রশাসনকে অবহিত করলেও কোন সেবা পাননি বলে জানিয়েছেন পরিচয় গোপন রাখা এক ক্ষতিগ্রস্ত। এমনকি তাদের আটকে রেখে বড় ধরনের নগদ অর্থ নেওয়ার মতো গুঞ্জন ভেসে আসছে রহস্যঘেরা এ কিশোর গ্যাংয়ের ট্রাজেডি থেকে।তথ্য আছে,মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আউটডোরের সামনে থেকে ভবনের পিছনপাশ বরাবর নির্জন থাকায় কয়েকজন যুবক হাসপাতাল বেষ্টনীতে নারীঘঠিত,মাদক সেবন ও বেচাকেনা পাশাপাশি দলবদ্ধভাবে অনলাইন জুয়ায় আসক্ত।১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী তরুনদের এমন একাধিক টিম সর্বত্র আতংক বিরাজ করে চলেছে মণিরামপুর উপজেলা ও পৌরশহরে।
অনুসন্ধান বলছে হাতে দামী স্মার্ট ফোন,ব্যবহার করছে বাহারি সব মডেলের হোন্ডা,শরীরে পরিহিত ভদ্রবেশী পোশাক,অশোভন আচরন ও চলাফেরা করা ১৪-১৮ বছর বয়সী এমন স্মার্ট তরুনেরা সব আবার মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত পরিবারের সদস্য।
দেশব্যাপী কিশোর গ্যাংয়ের এসব ঘটনার নেপথ্যে আছে অনলাইন জুয়া ও মাদকের সম্পৃক্ততা বলে প্রতিবেদনে এমনই তথ্য প্রদান করেছে কয়েকটি তথ্য অনুসন্ধানী সংস্থা।সংঘবদ্ধ এ চক্রের অপরাধের মাত্রা ও স্থান ভিত্তিক সময়কাল বিবেচনায় এ সমস্ত ক্রাইমের তথ্যনুযায়ী,অনলাইন জুয়া ক্যাসিনোর অর্থযোগানে পরিবার ব্যার্থ হওয়াতে উঠতি বয়সী তরুনেরা হুটহাট এমন আইন বহির্ভূত কর্মকান্ডে জড়িয়ে বড় ধরনের অপরাধীর তালিকায় উঠে আসছে।
আলাপকালে মণিরামপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি এড শহীদ মোঃ ইকবাল হোসেন বলেন,উঠতি বয়সী তরুনেরা অনলাইন জুয়া ক্যাসিনো ও মাদকের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে হওয়াতে অল্প বয়সে অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছে।অভিভাবকদের ছেলে মেয়েদের প্রতি সচেতন হতে হবে।তিনি আরো বলেন,অপরাধী কোনো দলের না,অপরাধ শনাক্ত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রয়োজনে আমিও সহযোগিতা করব।
সম্প্রতি মণিরামপুর পৌরসভা ও উপজেলাতে ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনায় তরুনদের সম্পৃক্ততা এবং অনলাইন জুয়া আসক্তি, মাদকের আগ্রাসন থেকে যুব সমাজকে রক্ষায় অভিভাবকদের সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে।পাশাপাশি গণমাধ্যম ও প্রশাসন যদি একসাথে কাজ করা যায় তাহলে কিশোর গ্যাং সহ সমস্ত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিহত ও অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে জানান,সহকারি পুলিশ সুপার মণিরামপুর সার্কেল ইমদাদুল হক।