
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
যশোরে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মাকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে দত্তক (পালিত) ছেলের বিরুদ্ধে। শনিবার শহরের মনিহারস্থ ফলপট্টি এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। ৯৯৯ ঘটনাটি জানতে পেরে পুলিশ বিকাল পাঁচটার দিকে নিহত খালেদা খানম রুমি (৫৫) মরদেহ উদ্ধার করে হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। এই ঘটনায় পুলিশ অভিযুক্ত ছেলে শেখ শামস্ (২২) আটক করেছে। নিহত খালেদা ওই এলাকার মৃত শেখ শাহজাহানের স্ত্রী।
স্থানীয়রা ও পুলিশ জানিয়েছে, মনিহারের ফলপট্টির শামস্ মার্কেটের দ্বিতীয় তলাতে খালেদা খানম বসাবস করেন। তার কোন সন্তান না থাকায় তিন মাস বয়স থেকে অভিযুক্ত ছেলে শামসকে দত্তক সন্তান হিসাবে বাড়িতে রাখতেন। শনিবার সকাল থেকে ফলপট্টির দোকানদাররা পানি না পাওয়াতে খালেদাকে ডাকাডাকি করেন। ঘর থেকে কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে চলে যান। পরে আবার দুপুরে আবার ডাকাডাকি করেন। ভিতর থেকে কেউ দরজা না খোলাতে দোকানদাররা ৯৯৯ কল দেন। পরে স্থানীয় ফাঁড়ির সদস্যরা এসে ডাকাডাকি করলে শামস্ দরজা খোলে। এ সময় পুলিশ ও দোকানদাররা খালেদার খোঁজ নিলে বাড়িতে নাই বলে জানিয়ে দেয়। পরে পুলিশের সন্দেহ হলে খালেদার কক্ষের দরজার কাছে গেলে দরজা খুলতে নিষেধ করেন। এক পর্যায়ে পুলিশের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে শুক্রবার রাত ১টার দিকে খালেদাকে লাঠি দিয়ে পিটিতে হত্যা করেছে বলে স্বীকার করেন। খালেদার কক্ষে মরদেহ রয়েছে বলেও শামস্ পুলিশকেও জানান। পরে খালেদার স্বজনের উপস্থিতিতে তার রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত ছেলেকে আটক করে কোতয়ালী মডেল থানার হেফাজতে রাখা হয়েছে। পুলিশ ও নিহতের স্বজনেরা জানান, শামস মাদকাসক্ত। বিভিন্ন সময়ে মাদকের টাকার জন্য সে তার মাকে মারধর করতেন।
প্রত্যক্ষদর্শী নাসির হোসেন নামে শামস মার্কেটের ভাড়াটিয়া বলেন, ‘শামস্ মার্কেটি এই অঞ্চলের বৃহৎ ফলপট্টি। সকালে নিচের দোকান গুলোর পানি না পাওয়াতে দ্বিতীয় তলাতে এসে খালেদাকে ডেকে না পেয়ে চলে যায়। পরে দ্বিতীয়বার দুপুরের পরে আবার ডাকাডাকি করি। তার ফোনও বন্ধ পায় আমরা। কেউ দরজা না খোলাতে আমরা জরুরি সেবা ৯৯৯ কল দেই। কল দিলে পুলিশ এসে অনেক ডাকাডাকি করলে অবশেষে শাসম্ দরজা খোলে। সে জানিয়ে দেয় তার মা খুলনাতে গেছে। পরে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে সে তার মাকে বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে জানিয়ে দেয়। তিনি বলেন, খালেদার কোন সন্তান নেই। দত্তক নিয়ে শামস্ বড় করেছে। সেই তিন মাস বয়সী থেকে ছেলের মতো মানুষ করেছে। শহরের সবচেয়ে নামকরা স্কুল দাউদ পাবলিকে পড়িয়েছে। নেশাগ্রস্ত হওয়াতে ক্লাস নাইনের পর সে আর পড়াশোনা করেনি। তার পরেও শামস্ কে অনেক ভালোবাসতো, খালেদা আপা। এমনকি এই মার্কেটটি তার নামে লিখে দিয়েছে। আমরা দেখেছি খালেদা কখনো সৎ ছেলের মতো দেখেনি শামসকে। তার পরেও সে জখন্য কাজটি করলো, তার মায়ের সাথেই’।
খালেদার ভাইয়ের ছেলে জুবায়ের তানভীর সিদ্দিকী জানান, ‘প্রায় শুনতাম শামস্ আমার ফুফুরে মারধর করতো। মাদকাসক্ত ছিলো সে। নিজের ছেলে না হলেও ছেলের মতো মানুষ করেছে। অথচ সেই মাকে নৃশংস হত্যা করেছে সে। এই হত্যার বিচার দাবি করছি।’
এই ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছে যশোর কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসনাত। তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছে ছেলেটি মাদকাসক্ত। কি কারণে এই হত্যা করেছে, সেটা তদন্ত চলছে। ছেলেটি আমাদের হেফাজতে রয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছে।