
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
মোঃ পারভেজ হাসান ২০২৩ সালে যুক্ত হয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ঐক্য-বন্ধন এর সাথে। বর্তমানে তিনি ঐক্য-বন্ধনের ধর্মীয় বিষয়ক সম্পাদক হিসাবে দায়িত্বরত আছেন। বর্তমানে সংগঠনের সদস্য সংখ্যা প্রায় শতাধিক।এ সদস্যের বেশিরভাগই নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ও সদ্য মাধ্যমিক পার হওয়া তরুণ-তরুণী। তারা কার্যক্রম পরিচালনা করে যশোরের বিভিন্ন এলাকায়। বর্তমানে ঐক্য-বন্ধন অসহায় মানুষের আত্মকর্মসংস্থান, ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও ক্রীড়াসামগ্রী বিতরণ, বৃক্ষরোপণ, মাস্ক ও স্যানিটাইজার বিতরণ করে যাচ্ছে। এ ছাড়া বিনামূল্যে রক্তদান কর্মসূচি, গরিব ও অসহায়দের পাশে দাঁড়ানো, ঈদে অসহায় পরিবারের মাঝে ঈদসামগ্রী বিতরণ, বাল্যবিয়ে, মাদক, দুর্নীতিবিরোধী প্রচারণামূলক,নারীদের সচেতন করতে উঠান বৈঠাক সহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। সংগঠনের মাধ্যমে প্রায় ৫ হাজার মানুষ সুবিধা পেয়েছে। তাদের কার্যক্রম নিজ গ্রামের গণ্ডি ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে আশপাশের একাধিক উপজেলায়।
ঐক্য-বন্ধনের চলমান কার্যক্রমের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে খাতা-কলম ও অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ প্রদানসহ পরীক্ষার মেধাক্রম অনুসারে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা এবং শিক্ষার্থীদের উন্নতি-অবনতি নিয়ে তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনা করা। সংগঠনটি অধিকারবঞ্চিত শিশুদের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে এছাড়াও আমরা বর্তমানে সংগঠনের সদস্যদের নিজস্ব অর্থায়নে ক্রিয়েটিভ স্কুল চালু করেছি যেখানে বিদ্যালয়ের পাঠ্য বইয়ের কোন পড়া আমরা পড়ায় না।আমরা গ্রামে কেন্দ্রের মাধ্যমে সপ্তাহিক ছুটির দিনে ছোট শিশুদের নিয়ে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, সংগীত চর্চা, কুইজ প্রতিযোগিতা, বিভিন্ন আবিষ্কার নিয়ে চর্চা,হাতের লেখা শিক্ষা, ধর্মীয় জ্ঞান প্রদান সহ মানবিক ও সামাজিক কাজে অনুপ্রাণিত করি। একজন ক্রিয়েটিভ, স্মার্ট,দক্ষ সামাজিক ও মানবিক মানুষ তৈরী করতে সকল ধরণের কর্মকাণ্ড আমরা করা চেষ্টা করে যাচ্ছি।
চেষ্টা করি এই ছোট বয়সে আমরা যেটা জানতে পারিনি তাদেরকে সেটা জানানোর জন্য। তাদের ভবিষ্যৎ নিয়েও কথা হয় আমাদের তাদের যতটা সম্ভব দিকনির্দেশনা দিয়ে অনুপ্রপণিত করি।আমরা সবাই মানবিক কাজ গুলোকে সহযোগিতা করি কিন্তু সামাজিক কাজ গুলো করি না.
সংগঠনের কার্যক্রম ও পরিচালনা সম্পর্কে জানতে চাইলে পারভেজ হাসান বলেন, ‘আমাদের সংগঠন পুরোই স্বেচ্ছাসেবী। নেই আলাদা কোনো ফান্ড। মূলত শিক্ষার্থীরা টিফিনের টাকা থেকে কিছু কিছু জমিয়ে এ সংগঠনের ফান্ডে জমা রাখে। তাই দিয়ে চলে আমাদের কার্যক্রম। তবে মাঝেমধ্যে সদস্যের বাইরেও কেউ কেউ নিজ থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। আসলে আমাদের ফান্ড আরেকটু শক্তিশালী হলে মানুষকে যেসব বিষয়ে সচেতন করে যাচ্ছি তা আরও জোরালোভাবে করতে পারতাম। আগামীতে আমরা সদস্যদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে বিভিন্ন ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান করার চিন্তা করেছি যেটা থেকে সদস্যদের ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কমসংস্থান হবে বলে আশা করছি।
বর্তমানে সাম্প্রতিক সময়ে বন্যা কবলিত মানুষের জন্য আট শতাধিক পরিবারের মাঝে শুকনা ও রান্না করা খাবার বিতারন করছে এবং তাদের পূর্ণবাসন ও কর্মসংস্থানের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
পারভেজ হাসান আরও বলেনঐক্য বন্ধন – টিফিনের টাকায় গড়া একটি বড় স্বপ্ন
আমাদের আশেপাশে যখন স্বার্থ আর নিজের ভালোর চিন্তাই বড় হয়ে দাঁড়ায়, তখন “ঐক্য বন্ধন”-এর মত একটি সংগঠন যেন এক টুকরো আশার আলো। টিফিনের টাকায় পরিচালিত এই সংগঠন কেবল একটি নাম নয়, এটি একটি চেতনা—সহমর্মিতার, দায়িত্ববোধের, এবং পরিবর্তনের।
এই সংগঠনের প্রতিটি সদস্য হয়তো বিশাল কোনো দানশীল নয়, কিন্তু ছোট ছোট অবদানের মাধ্যমে তারা গড়ে তুলেছে এক শক্তিশালী ঐক্য। নিজেদের টিফিনের খরচ বাঁচিয়ে, তারা দাঁড়িয়েছে অন্যের পাশে—কখনো দরিদ্র শিশুর লেখাপড়ায়, কখনো অসুস্থ মানুষের চিকিৎসায়, আবার কখনো সমাজের অবহেলিত মানুষদের পাশে।
এই বন্ধনের পেছনে আছে হৃদয় থেকে উৎসারিত একটা মন: “আমি একা নই, আমরাই পারি”—এই বিশ্বাসই ঐক্য বন্ধনের চালিকাশক্তি। এই সংগঠন আমাদের শেখায়, সমাজে কিছু ভালো পরিবর্তন আনতে ধনী হওয়া লাগে না, লাগে কেবল ইচ্ছা, আন্তরিকতা আর একটুখানি ত্যাগের মানসিকতা।
আমার মনে হয়, এমন একটি সংগঠন শুধু সমাজের নয়, আমাদের ভবিষ্যতেরও শক্ত ভিত। “ঐক্য বন্ধন” আমাদের স্বপ্ন দেখায়—একটি মানবিক, সংবেদনশীল সমাজের যেখানে ছোট অবদানও গড়ে তুলতে পারে বড় পরিবর্তন।